জাকাত ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান

Mon, 4 April, 2022 4:32 PM

মুত্তাকীর অন্যতম গুণ হচ্ছে, ‘আমি (আল্লাহ) তাদের যে রুজি দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। (সূরা আল বাকারা-৩) অর্থাৎ যারা মুত্তাকী তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেন। এই ব্যয়কে ইসলামী পরিভাষায়  সদকা  বলা  হয়।  সদকা  দু’ ধরনের। একটি নফল সদকা, অপরটি ফরজ সদকা। ফরজ সদকাকে পরিভাষায় জাকাত বলা হয়। অর্থাৎ জাকাতও তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। জাকাত বছরের যে কোনো সময়ই আদায় করা যায়। কিন্তু পবিত্র রমজান মাসে যেহেতু একটি নফল আদায় করলে অন্য মাসের একটি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায় এবং একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায় তাই রমজান মাসে নফল সদকা এবং ফরজ সদকা অর্থাৎ জাকাত আদায়ের পরিমাণ বেশি বেশি হয়। এছাড়া হাদীস শরীফে আছে হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, রমজান মাসের রোজা ব্যতীত সবচেয়ে উত্তম রোজা কোনটি? তিনি বললেন, রমজানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও এর জন্য প্রস্তুতিমূলক শাবান মাসে রোজা রাখা। তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, কোন দান সর্বাপেক্ষা উত্তম? জবাবে তিনি বললেন, রমজান মাসের দান সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম। (তিরমিজী)

নামাজ যেমন ফরজ, রোজা যেমন ফরজ তেমনি জাকাতও ফরজ ইবাদত। জাকাত শব্দের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া এবং পবিত্রতা। জাকাত আদায়ের দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং এতে খুব বরকত হয়। হাদীস শরীফে আছে, জাকাত আদায়ের কারণে ধন-সম্পদের কোনো প্রকার ঘাটতি দেখা যায় না, বরং তা আরও বৃদ্ধি পায়। (মুসলিম) জাকাত হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ যা অত্যাবশ্যকীয় ও সম্পূর্ণ নিশ্চিত একটা বিধান। কোনো মুসলমান এটাকে অস্বীকার করতে পারে না। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. তাঁর খেলাফতকালে একদল লোককে শুধু জাকাত অস্বীকার করার কারণে মুরতাদ ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা যদি নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও, আমার রাসূলগণের উপর ঈমান আনো ও তাঁদের সম্মান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করো তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয়ই প্রবেশ করাব জান্নাতে, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত হবে। এরপরও কেউ কুফরী করলে সে সরল পথ হারাবে। (সূরা আল মায়েদা-১২)

জাকাত আদায় করলে প্রচুর সওয়াব আছে। অনুরূপ জাকাত আদায় না করলে প্রচুর শাস্তির কথাও বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং ওগুলো আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে ওগুলো উত্তপ্ত করা হবে এবং ওগুলো দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব  ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে, সেদিন বলা হবে, এটা ওই যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। (সূরা আত তাওবা-৩৪-৩৫)

গরীব আত্মীয় স্বজন জাকাত পাওয়ার প্রথম হকদার। তাদের জাকাত দিলে দ্বিগুণ সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি যারা মাদরাসায় লেখাপড়ে করে তাদেরও জাকাত দিলে দ্বিগুণ সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। আপনাদের প্রিয় জামি‘আ রহমানিয়ায় বহু অসহায়, দরিদ্র, এতীম ছাত্র আবাসিক থেকে লেখাপড়া করে। মাদরাসার লিল্লাহ ফান্ড থেকে তাদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা ও লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ সরবরাহ করা হয়। আপনার জাকাতের একটি অংশ এই মাদরাসার লিল্লাহ ফান্ডে জমা দেওয়ার বিশেষ অনুরোধ রইল।

ড. মাওলানা ইমতিয়াজ আহমদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *