রহমানিয়া তামাদ্দুন মজলিস জামি‘আ রহমানিয়া রাজশাহীর একটি শাখা। এটি মূলত অত্র জামি‘আর সাংস্কৃতিক বিভাগ। বিশুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা ও মৌলিকভাবে দুটি মহৎ ও বৃহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

(ক) বিশুদ্ধ মাতৃভাষা চর্চা ও সাবলীল বক্তব্য

ভাষা ও বক্তব্য আল্লাহ তাআলার এক অপূর্ব নেয়ামত। বিশুদ্ধ ভাষা ও সাবলীল বক্তব্যের মাধ্যমে একটি জাতির মাঝে বিপ্লব সৃষ্টি করা সম্ভব। ভাষা ও বক্তব্যে যারা যত বেশি পারদর্শী, জাতির মাঝে তারা ততো বেশি সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য।

একটি মিথ্যা কথাও যদি সাবলীল ভাষায় সাজিয়ে গুছিয়ে বলা যায়, দেখা যায় মানুষ সে  কথাকেই বেশি গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যারা শুদ্ধ ভাষায় সাবলীলভাবে বক্তব্য প্রদান করতে পারে না, তারা অনেক জ্ঞানের অধিকারী হওয়া স্বত্বেও জাতি তাদের দ্বারা বেশি উপকৃত হতে পারে না।

প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন!

ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় যারা সংবাদ পরিবেশন করে, তারা এত সুন্দর ভাবে একটি খবরকে উপস্থাপন করে যে উক্ত খবরটি যদি মিথ্যা সংবাদও হয়, তথাপিও শ্রোতারা তাদের জাদুকরী উপস্থাপনার কারণে তাদের প্রদত্ত সংবাদকে বিশ্বাস করে ফেলে। এজন্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিছু কিছু বয়ান জাদুর মত প্রভাব সৃষ্টি করে”। (তিরমিজি)

বিশুদ্ধ ভাষা ও সাবলীল বক্তব্যের এত গুরুত্বের কারণেই সমস্ত নবী-রাসূলকে আল্লাহ তাআলা স্ব স্ব জাতির ভাষাভাষী করে এবং ঐ ভাষার দক্ষতা সম্পন্ন করে পাঠিয়েছেন। কারণ দাওয়াতি কাজে ভাষা ও বক্তব্যের গুরুত্ব অনেক বেশি।

এ কারণেই জালীলুল কদর পয়গম্বর হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর মুখে জড়তা থাকায় তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করলেন যে, মনে হয় জড়তাপূর্ণ ভাষায় ফেরাউনের দরবারে দাওয়াতে এলাহি উপস্থাপন করা হলে তারা এটা কবুল করবে না। যার ফলশ্রুতিতে তিনি স্বীয় বড় ভাই স্পষ্টভাষী ও বিশুদ্ধ ভাষায় বক্তব্য প্রদানে পারদর্শী হযরত হারুন (আ.)-কে নবী বানানোর জন্য আল্লাহর কাছে দরখাস্ত পেশ করলেন। যাতে ফেরাউনের রাজদরবারে বিশুদ্ধ ও সাবলীলভাবে একত্ববাদের দাওয়াত উপস্থাপিত হয়।

কুরআনে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরা হয়েছে- আমার ভাই হারুন, সে আমার চেয়ে প্রাঞ্জলভাষী। অতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্য প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন জানাবে। আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে। (সূরা কাসাস-৩৪)

এ লক্ষ্যেই ইলম অর্জনের পর তা সাবলীল ভাষায় মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া, বলিষ্ঠ কণ্ঠে ইসলাম বিরোধী সমস্ত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করা এবং কর্মক্ষেত্রে দাওয়াত ও তাবলীগের কর্তব্য পালনের যোগ্যতা অর্জনের জন্য রহমানিয়া তামাদ্দুন মজলিস কর্তৃক শিক্ষার্থীদের মাঝে সপ্তাহান্তে বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

(খ) লিখনী ও সাহিত্য চর্চা

বর্তমান যুগে লিখনী ও সাহিত্য চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিশেষত মুসলিম উম্মাহর বর্তমান দুর্দিনে যখন বাতিলরা তাদের লিখনী শক্তি দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের পঙ্গু করে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তারা তাদের লিখনী শক্তি দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। বিষোদগার করেই চলছে। এখন নতুন করে আলেমদেরই ভাবতে হবে। নতুন উদ্যোমে কাজ করতে হবে। লিখনী শক্তিকে ইসলাম বিরোধী শক্তির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের দখলে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

এ লক্ষ্যেই রহমানিয়া তামাদ্দুন মজলিস চায়-

(ক) লেখালেখির প্রতি ছাত্রদের আগ্রহ সৃষ্টি করা

(খ) নবীন লেখকদের সঠিক পথ প্রদর্শনের মাধ্যমে সহযোগিতা করা

(গ) বাংলা ভাষাকে ইসলাম বিদ্বেষীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের করতলগত করা

(ঘ) এমন একদল কলম সৈনিক তৈরি করা, যারা তাদের লিখনীর মাধ্যমে বাতিলের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে সক্ষম হবে।

মুফতি আলী আকবর ফারুকী